প্রিয় শিক্ষার্থীবন্ধুগণ! কওমী মাদরাসার ইতিহাস জানতে হলে আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে সুদূর আরবের ঐতিহাসিক জাবালে নূরের সুপসিদ্ধ হেরা গুহায়। যে স্থানে কওমী মাদরাসার সর্বপ্রথম দরস আরম্ভ হয়ে ছিলো, আল্লাহ তায়ালা বিশ্ব মানবতার মুক্তিরদূত রাসুলে আরাবি সা.-কে সায়্যিদুল ফেরেশতা হযরত জিবরাঈল আমিন আ. এর মাধ্যমে ’ইকরা’ তুমি পড় শব্দ দ্বারা সর্বপ্রথম দরস দিয়েছিলেন। এই দরসের ধারাবাহিকতায় আল্লাহ তায়ালা রাসুল সা.-কে পুরো কোরআন শরীফ শিক্ষা দিলেন। রাসুল সা. কোরআনের এই শিক্ষা সাহাবিদের মাঝে বিতরণ করার জন্য সর্বপ্রথম যে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার নাম দারুল আরকাম,যা আরকাম ইবনে আবিল আরকাম র. এর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়। ইতিহাসে এটাকে মক্কার প্রথম মাদরাসা বলে। তবে সেই যুগের কুলাঙ্গার আবু জাহল উৎবা সায়বার কারণে তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। হজ্বের মওসুমে মদীনা থেকে প্রথম বছর ছয়জন মদীনাবাসী এসে আকাবাতে বায়আত গ্রহণ করে দেশে ফিরে ইসলামী তালীমের জন্য শিক্ষক তলব করলেন। তখন হুজুর, মাসআব ইবনে উমায়েরকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেন। ইসলামী ইতিহাসে এই প্রথম কওমী শিক্ষক হিসাবে পাঠানো। তিনি মদীনায় আসআদ ইবনে যুরারাহ রা. এর বাড়িতে মাদরাসার উদ্বোধন করেন। এটাকে মদীনার প্রথম মাদরাসা বলা হয়। হিজরতের পর মদীনায় ইসলামী জয়োগান হয়। তাই মসজিদে নববীতে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এই শিক্ষালয়ের নাম ছিল আসহাবে সুফফা।
প্রিয় শিক্ষার্থীবন্ধুগণ! রাসূল সা. এর যুগে আরবের ভৌগোলিক পরিধি ছিল মাত্র কয়েকশত বর্গকিলোমিটারের মধ্যে সীমিত। যখনই কোন সমস্যা দেখা দিত সাহাবায়ে কিরাম তাৎক্ষণিক ছুটে আসতেন রাসূল সা. এর দরবারে। মুহূর্তের মধ্যে সমাধা হয়ে যেত। কিন্তু যখন হযরত উমরের খেলাফত কাল আসলো ইসলামে ফতুহাতও হতে থাকলো,ঠিক তখনই প্রয়োজন দেখা দিল ইসলামী শিক্ষা-সভ্যতার। তাই হযরত ওমরের যুগে ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ঘটেছিল। ফলে ইরাকে অনেক ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। এখানে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শিক্ষক হিসেবে ছিলেন। প্রতিনিয়তই ছাত্রসংখ্যা বেড়ে যেতে শুরু করল। ছাত্রসংখ্যা বেশি হওয়াতে হযরত আলী রা. শিক্ষক হিসেবে এখনে আগমন করেন। তাঁকে ইরাকের প্রায় বারো হাজার তাবেয়ী মুহাদ্দিসীন সংবর্ধনা দেন। ইরাকের কুফা নগরীতেই ইমাম আবু হানিফা রহ. শিক্ষা গ্রহণ করেন। এ ধারার বিস্তার ঘটতে থাকে খেলাফতে রাশেদার যুগ পর্যন্ত। খেলাফতে রাশেদার যুগের পর ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিচ্যুতি ঘটে ফলে ধর্মীয় শিক্ষার পরিধি সীমিত হয়ে আসে। তখন মাদরাসাগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক, খানকাকেন্দ্রিক হতে থাকে। প্রায় চার শতাব্দি পর্যন্ত এ অবস্থা অব্যাহত থাকে। ৪০১ হিজরী থেকে ধর্মীয় শিক্ষার রূপ পরিবর্তন ঘটে। ১০১৯ খৃষ্টাব্দে আফগানিস্তানের বীর পুরুষ সুলতান মাহমুদ গজনবী গজনীর উপকণ্ঠে বিশাল কুতুব খানা মসজিদ মাদরাসা নির্মাণ করেন। এই বিশাল কমপ্লেক্স তৈরি করতে যা ব্যয় হয় তা তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বহন করেন। ধর্মীয় শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক ও শ্রেণীভিত্তিক এই আমল থেকে বিস্তার লাভ করে। সুলতানের ইন্তেকালের পর তার স্বীয় পুত্র বাদশাহ মাসউদ পিতার এই সুমহান ধারার গতিকে আরো বেগবান করতঃ আফগানের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অব্যাহত গতিতে চালিয়ে যান। এ ধারা প্রায় দু’শ বছর পর্যন্ত চলতে থাকে।
প্রিয় শিক্ষার্থীবন্ধুগণ! ৬ষ্ঠ শতাব্দির পূর্ব পর্যন্ত কোন মাদরাসায় হাদিসের দরস চালু ছিল না। ৬ষ্ঠ শতাব্দিতে সিরিয়ার রাষ্ট্রপতি বাদশাহ নূরুদ্দীন জঙ্গি রহ. ৫৬৯ হি. মুতাঃ ১১৭৮ খৃষ্টাব্দে একটি দারুল হাদিস নির্মাণ করেন। ইতিহাসে এর পূর্বে পৃথক ব্যবস্থাপনায় হাদিসের দরসের কোন তথ্য মিলে না।
প্রিয় শিক্ষার্থীবন্ধুগণ! আমাদের এই উপমহাদেশে কওমী মাদরাসা সূচনা কিভাবে হয়েছিলো। জানতে হলে চোখ রাখুন ইতিহাসের সেই উইপোঁকা খেয়ে ফেলা ছিঁড়া পাতার দিকে,জর্জরিত মাটি মিশ্রিত পৃষ্ঠা গুলোতে লিখা আছে,যে উপমহাদেশে ইসলামের সুশীতল হাওয়া লেগেছিল ১ম শতাব্দিতে সাহাবায়ে কিরামের যুগ থেকেই। ইতিহাসে চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে সাহাবীদের আগমনের তথ্য পাওয়া যায়। তবে ইসলামী সভ্যতা ব্যাপক হারে গড়ে উঠেছিল প্রায় সপ্তম শতাব্দিতে। হিজরী সপ্তম শতাব্দির প্রথমার্ধে মধ্য ভারতে ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখন সম্রাট কুতুবুদ্দীন আইবেক ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটানোর জন্য মুলতানসহ বিভিন্ন স্থানে মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলামী কৃষ্টিকালচার প্রতিনিয়ত দ্রুতগতিতে বিস্তার লাভ করতে থাকে। ৭২৫ হিজরী সনে বাদশাহ মোহাম্মদ তুঘলকের আমলে প্রচুর মাদরাসা মসজিদ হতে থাকে। ঐতিহাসিকগণ বলেন মাদরাসার সংখ্যা এত বৃদ্ধি পেয়েছিল যে, শুধু দিল্লীতেই প্রায় এক হাজারের বেশি মাদরাসার সন্ধান পাওয়া যায়। এ সময়কালে নারীদের মধ্যেও দীন শিক্ষার চেতনা ছড়িয়ে পড়েছিল। বাদশাহ মোহাম্মদ তুঘলকের যুগে অনেক মহিলাহাফেজের কথা উল্লেখ রয়েছে।
প্রিয় শিক্ষার্থীবন্ধুগণ! বর্তমানে দরসে নিজামির বা সিলেবাসভিত্তিক শিক্ষার ইতিহাস হলো।
১১০০ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকহারে থাকলেও তা কোন সিলেবাসভিত্তিক বা কারিকুলামের আলোকে ছিল না। কিন্তু ১১০৫ হিজরীতে মোল্লা নেজামুদ্দীন সাহলাভী ইসলামী শিক্ষাকে ঢেলে সাজান। তিনিই বর্তমান দরসে নিজামী মাদরাসা শিক্ষা পহ্নতির জনক। তিনি ছিলেন একাধারে দ্বীনের সুদক্ষ আলিম, ফিকাহবিদ, দার্শনিক,ভাষ্যকার এবং একজন শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ। তিনি গঠনমূলকভাবে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে প্রায় ১১টি বিষয়ের সমন্বিত একটি সিলেবাস প্রণয়ন করেন। ইতিহাসে এটাই দরসে নিজামীয়া বা নিজামী নামে পরিচিত।
প্রিয় শিক্ষার্থীবন্ধুগণ! বাংলাদেশে কওমী মাদরাসার ইতিহাস হলো।
ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, তথা বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের ন্যায় বাংলাদেশেও অনেক পূর্ব থেকে অসংখ্য কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সিপাহসালার ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী বঙ্গদেশ বিজয় করার পর রংপুরে তিনি একটি কওমী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে শাহ তুরকান শহিদ বগুড়া অঞ্চলে, শাহ তাকি উদ্দীন আরাবী রহঃ রাজশাহীতে এবং ১২৭৮ খৃস্টাব্দে বিশিষ্ট মুহাদ্দিস শরফুদ্দীন আবু তায়ামা রহঃ বাংলাদেশের রাজধানী সোনারগাঁয়ে একটি উচ্চমানের মাদরাসা স্থাপন করেন। ঐতিহাসিকদের মতে বাংলাদেশে বৃটিশদের আগমণের পূর্বে প্রায় ৮০ হাজার মাদরাসা ছিল। দি ইন্ডিয়ান মুসলমান লেখক ডাব্লিউ-ডাব্লিউ হান্টার লিখেন, মুসলিম শাসনামলে প্রতি আশি জনের জন্য একটি মাদরাসা ছিল। মানুষের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ শত থেকে সহস্র গুণ বেগে বাড়তে থাকে। কালক্রমে নজর পড়ে বৃটিশ বেনিয়াদের। এক সময় তারা দখল করে নেয় এই উপমহাদেশের মুসলিম স্বাধীনতা। প্রায় দু’শ’ বছর গোলামীর শৃংখলে আবদ্ধ জীবন যাপন করতে বাধ্য ছিল এদেশের মানুষ। ইংরেজদের জুলুম-নির্যাতন স্বকীয়তা হরণ জনমানুষের রোষের সৃষ্টি হয়। উপরুন্ত উলামায়ে কিরাম তাদের হীন উদ্দেশ্যের মুখোশ উন্মোচন করতঃ তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের ফতওয়া দেন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড লড়াই হতে থাকে। এক পর্যায়ে ১৭৫৭ খৃঃ ইংরেজদের সাথে পলাশীর ময়দানে তারা সশদ্ধ সংগ্রামে লিপ্ত হন এবং মুসলিম নেতাদের শাহাদাতের মধ্য দিয়ে বাহ্যিক দিক থেকে পরাজয়বরণ করেন। ফলে এদেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল উৎস জায়গীর ও ওয়াক্ফকৃত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে দিলে মাদরাসাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও ইসলামী শিক্ষা থেমে থাকেনি। সরকারি বন্দোবস্ত না হওয়া সত্ত্বেও মাদরাসার প্রচলন বাকি ছিল। সর্বশেষ ১৮৫৬ সালের বিপ্লবের পর মুজাহিদদের সাময়িক ব্যর্থতায় দিল্লী মারকাজের পতনে ইসলামী শিক্ষার জোয়ার থেমে যায়। এভাবে প্রায় দশটি বছর কেটে যায়। মুসলমানদের ভাগ্যাকাশে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসে। জাতি পথ হারা, উদভ্রান্ত হয়ে হতবিহবল হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে হযরত কাসেম নানুতুবী দেওবন্দের দেওয়ান মহল্লায় স্বীয় শ্বশুরবাড়ী বেড়াতে আসেন। বাড়ী সংলগ্ন সাত্তা মসজিদের ইমাম হযরত আবিদ হোসাইন সাহেবের সাথে মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হওয়ার পর মিরাট থেকে মোল্লা মাহমুদ সাহেবকে ডেকে এনে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দান করে দেওবন্দে পাঠিয়ে দেন। অবশেষে ১৮৬৬ সালের ৩০ মে বুধবার ঐতিহাসিক বিদ্যাপীঠ দারুল উলুমের উদ্বোধন হয় সাত্তা মসজিদের বারান্দায় ডালিম গাছের নিচে। মোল্লা মাহমুদ সর্বপ্রথম ছবক দান করেন সর্বপ্রথম ছাত্র শায়খুল হিন্দ হযরত মাহমুদ হাসানকে দিয়ে। কি চমৎকার কাকতালীয় ব্যাপার। ছাত্র-উস্তাদ একই নাম। তাও মাহমুদ (প্রশংসিত)। আল্লাহপাক মানুষের মধ্যে এ প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা বহ্নমূল করে দিয়েছেন। তখন এই মাদরাসাটি দেওবন্দ আরবী মাদরাসা নামে পরিচিত ছিল। ১২৯৬ হিজরীতে সদরুল মুদাররিসীন হযরত ইয়াকুব নানুতুবী রহঃ-এর প্রস্তাবে মাদরাসার নামকরণ করা হয় দারুল উলুম দেওবন্দ। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন স্থানে মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে দারুল উলুম থেকে ফারিগ উত্তীর্ণ আলিমগণ শিক্ষা সমাপ্ত করে দেশে-বিদেশে এই কারিকুলামের অনুসরণে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার তৎপরতা শুরু করেন। ফলে ভারত,পাকিস্থান,বাংলাদেশ, আফগানিস্থান প্রভৃতি দেশে অসংখ্য কওমী মাদরাসা গড়ে উঠে। ২য় বিষয়ঃ কওমী মাদ্রাসার অবদান
বিশ্ব বাসির প্রতি কওমী মাদরাসার অবদান অপরিসীম। যা ভাষায় প্রকাশ করা আদৌও সম্ভব নয়। তবে অসংখ্য অবদান থেকে কিছু বলবো। প্রিয় শিক্ষার্থীবন্ধুগণ! ‘কওমী মাদ্রাসা’ ছাত্রদেরকে কুরআন-হাদীসের আলোকে জ্ঞান দান করে, ত্যাগী,পরোপকারী, সমাজসেবক করে তোলে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যারা জড়িত তারা চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী, ভূমিদখল, হলদখল, দুর্নীতি, মিথ্যা, প্রতারণা,ইভটিজিং, নারীর অবমাননা, অপকর্ম, চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবী, অপসংস্কৃতি ইত্যাদির সাথে কোন রকমের সম্পর্ক রাখে না। মুহতারাম হাজিরীন! কওমী মাদরাসার সব চেয়ে বড় অবদান কি জানতে চান!তাহলে শুনুন! কওমী মাদরাসা না হলে আজ হয়তো হয়তো পৃথিবী টিকে থাকতো না,কারণ পৃথিবী বেঁচে থাকবে ততদিন, আল্লাহ আল্লাহ বলনে ওয়ালা বেঁচে থাকবে যতদিন, আর কওমী মাদরাসা আল্লাহ আল্লাহ বলনে ওয়ালা তৈরি করার ফ্যাক্টরি।
প্রিয় সংরামি সাথিও বন্ধুগণ!ওলামায়ে কেরাম দেশ ও জাতির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ইসলামী মূল্যবোধের হেফাজতের লক্ষ্যে তাঁরা খোদায়ী মদদে বুকটান করে এগিয়ে আসেন। তার বাস্তব নমুনা দেখতে হলে ফিরে থাকান সেই ইংরেজ লাল কুত্তা বাহিনীর দিকে, তারা যখন মুসলমানদের ধন-সম্পদ গুলোকে লুটতরাজ করে, ঘর বাড়ি গুলো ধব্বংস করে দিয়ে ছিল, মুসলিম নারীদের সম্ভ্রমহানী করেছিল, গর্ববতী নারীদের পেট থেকে বাচ্ছা বের করে হত্যা করেছিল, এবং দেশ ও জাতির উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চাল করে ছিল, হাজার হাজার উলামায়ে কেরামকে গাছের নিচে ফাঁসি কাস্টে ঝুলিয়ে ছিল, সাধারণ মুসলমান ও জনগণের হাহাকার আআত্নচিৎকারে যখন আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হচ্ছিল, ঠিক তখনি আবির্ভাব হল এক মহাবীর সাহসি যোদ্ধার, যার নাম” আল্লামা শাহ আব্দুল আজীজ দেহলভী রহ ১৭৭২ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম তিনি জিহাদের ফতোয়া প্রদান করেন। ১৭৯৯ সালে সুলতান টিপু শহীদ রহ. ইংরেজদের বিরুদ্ধে মহীশুর যোদ্ধ সংগঠিত করেন। এ যোদ্ধে শাহাদাতের পূর্বে তাঁর ঐতিহাসিক চির অমর বাণী ছিল “ শৃগালের ন্যায় শত বছর বেঁচে থাকার চেয়ে, সিংহের মত এক দিনের জীবন অতি উত্তম।”। ১৮৩১ সালে সায়্যেদ আহমাদ শহীদ রহ. ঐতিহাসিক বালাকোটের রণাঙ্গনে ইংরেজদের বিরুদ্ধে যোদ্ধ করতে করতে রক্তমাখা কাঁচা কাটা মস্তক দিয়ে খোদার সামনে নিজের লাশটা পেশ করেছিলেন। ১৮৩১ সালে শহীদ তিতুমীর রহ. এবং তার অনুসারিরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে সশস্ত্রে যুদ্ধ করার জন্য নারকেল বাড়িয়ায় সেই ঐতিহাসিক বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করেছিলেন। ১৮৫৬ সালে গোটা ভারতবর্ষের উলামায়ে কেরাম ইংরেজদের বিরুদ্ধে এক কনফারেন্স করেন। যেখানে হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজেরে মাক্কী, মাওলানা কাসেম নানুতবী, মাওলানা রশিদ আহমাদ গাঙ্গুহী প্রমুখ উলামায়ে কেরাম যোগদান করেন। সেখানে কাসেম নানুতবী রহ. এক ঈমান দীপ্ত ভাষণ দিলেন,আপনারা সবাই অবগত আছেন, ইংরেজ আমাদের মাথার উপর দাঁড়িয়ে আছে। সমগ্র ভারতবর্ষে তারা তাদের শাসন ক্ষমতার জাল বিছিয়ে দিয়েছে। অতএব এখনই যোদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যান, আমরা জীবন দিব,তবুও ইংরেজদের গোলামী ও বশ্যতা স্কীকার করব না। তাদের সাথে মুকাবেলা করে তাদেরকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করব। বিজয় আমাদের সন্নিকটে ইনশা আল্লাহ। ১৮৫৭সালে সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ সংগঠিত হয়। এভাবে তিলে তিলে ভারতবর্ষকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দিখিয়েছিলেন উলামায়ে কেরাম অবশেষে ১৯৪৮ সালে ইংরেজরা ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়। এবং ভারতবর্ষে স্বাধীনতার কেতন পতপত করে উড্ডিন হতে ছিল। ও দু,,,স্তু…..! এই তো ছিলো ভারত স্বাধীনতার ইতিহাস, আমার বাংলা স্বাধীনতার ইতিহাসও তোমাকে জানতে হবে। তবে শুনে রাখ! বাংলার স্বাধীনতায় কওমী ওলামায়ে কেরামের অবদান অন্যদের তুলনায় কোন দিক দিয়ে চুল পরিমানও কম ছিলনা। হাফেজ্জি হুজুর রহমাতুল্লাহআলাইহি, ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম (রহ:) মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। হাফেজ্জি হুজুর রহ. বলেছিলেন। এটা হচ্ছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ। পাকিস্তানিরা হচ্ছে জালেম আর আমরা বাঙ্গালীরা হচ্ছি মাজলুম। তাদের এই ফতোয়া শুনে অনেক বড় বড় আলেম মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। মাওলানা হামিদুর রহমান ভাষানী. ও মাওলানা আতহার আলি রহ. মুক্তিযোদ্ধের ৪র্থ নেতা ছিলেন। সুতরাং যারা কওমী ওলামাদেরকে জাতির বুঝা বলে আক্ষায়িত করতে চাও । তাদেরকে বলবো। কওমী আলেমরা জাতির বুঝা নয়। বরং তারা হলো ,জাতির গটফাদার, স্বাধীনতার সূর্যন্তান, এ জাতিকে পরাধিনতার জিঞ্জির থেকে মুক্তির খলনায়ক ওলামায়ে কেরাম, আরে ভারতবর্ষে স্বাধীনতার আজানের সময় রাজনীতি তন্ত-মন্ত্র কিছুই ছিলেনা,মহাত্বাগান্ধীদেরকে ভাঙ্গা হারিকেন দিয়েও তখন খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাই কবির ভাষায় বলতে চাই! তোরা’কার উছিলায় শিন্নি খাইল, মোল্লা চিনলিনা’।
সুতরাং স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে যদি কোন বই লেখা হয়, সেই বইয়ে অবশ্যই ওলামায়ে কেরামের ইতিহাস আনতে হবে। আর যদি তা না হয়, সম্ভব হলে সেই বই আমরা ছুঁড়ে ফেলবে, মাটিতে পুঁতে দিবে। বাংলার মাটিতে তা প্রচার করতে দেওয়া হবে না। হবে না। ইনশা আল্লাহ।
হে উমরের সৈনিক কি ভাবছো! কওমি মাদরাসার অবদান শুধু কি তাই,,? No Impossible বরং আজ কওমি ওলামায়ে কেরাম যদি কোররআন হাদিস সুন্নাহ এবং ফেকাহ শিক্ষা না দিতেন, তাহলে আজ পৃথিবীর মানুষ পুশুর মতো জীবন জাপন করতো, যেখানে কোন জন্মের পরিচয় থাকতো না, মাতা-পিতার পরিচয় থাকতো না, ছেলে সন্তানের পরিচয় থাকতো না। সুতরাং যারা উলামায়ে দ্বীনকে ভিন্ন নজরে দেখতে চাও তাদেরকে বলবো, শুনো। যদি আজ ওলামায়ে দ্বীন না থাকতো, তাহলে ছহীহ তরিকায় তোমার মায়ের বিয়ে হতো না মারা গেলে তোমার বাবার জানাযা হতো না, তোমার বাবাকে জানুয়ারের মতো মানুষ গর্তে নিক্ষেপ করে আসতো। সুতরাং ওলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে কথা বলতে হলে সাবধান কথা বলো।অন্যথায় পিঠের চামড়া থাকবে না।
পরিশেষে কবি ফারাজদাকের কণ্ঠে মুসলিম বিরুধী সমস্ত অপশুক্তিকে সেই ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে গেলাম।
أُولَئِكَ آبَائي، فَجِئْني بمِثْلِهِمْ، = إذا جَمَعَتْنا يا جَرِيرُ المَجَامِعُ
(وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين)