মাকে বিদায় জানাতে আমি এয়ারপোর্টে।
পড়তে পারেন!আশা করি শেষ করতে মন চাইবে।
আজ বৃহস্পতিবার মনটা খুব ফ্রেশ,হৃদয়টা ভারী আনন্দিত, মেজাজটা খুব ফুড়ফড়ে, সাজগোছ করছি,কাপড় গোছাচ্ছি।আনন্দ হচ্ছি,অন্যকে আনন্দ দিচ্ছি , কেমন যেন,মনে হচ্ছিল খুশির আবেগটা চেহারায় পস্ফুটিত হচ্ছে, কারণ,বাড়ি যাবো,মায়ের কুলে ফিরবো,আগামীকাল তাঁকে বিদায় জানাবো।
তাই সকাল সকাল রওয়ানা করলাম, সূর্যি মামা পশ্চিমে ডলে যাওয়ার পরক্ষণে বাড়ি ফিরলাম,দরজায় দাঁড়িয়ে ভাবছি, আর অনুভূতিটাকে তরতিব দিচ্ছি,
কলিংবেলটা চাপদিবো,ভিতরে প্রবেশ করবো,মাকে দেখে অস্বস্তি হৃদয়কে স্বস্তি করবো,হাসোজ্জল চেহারা নিয়ে জিজ্ঞেস করবো।মা আপনি কেমন আছেন!? পলকের বৃদ্ধি ঘটাবো, হজের সাওয়াবের সংখ্যা বাড়াবো।
কিন্তু কলিংবেলটা চাপদিতে গিয়েই থমকে দাঁড়ালাম, ভিতর থেকে আওয়াজ আসছে, অস্পষ্ট আওয়াজ, কান্নার আওয়াজ। কৌতুহলী মনে তড়িঘড়ি করে প্রবেশ করলাম, ঘরবর্তী পরিচিত অপরিচিত মানুষের এক মিলনমেলা, সবাই রোনাজারি করছে,কাকুতি-মিনতি করছে, মায়ের জন্য দোয়া করছে।কারণ,আগামীকাল মা আর ছোট ভাই সৌদি যাবে, উমরাহ করবে, দুই মাস থাকবে। দোয়ার মাঝে তাদের কান্না দেখে নিজেকেও আর স্থীর রাখতে পারিনি,কিন্তু সবাই মহিলা হওয়ার কারণে আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যেতে লাগলাম,পরক্ষণে রুম চেইঞ্জ করলাম, সোফার উপর বসে কতক্ষন সজোরে ক্রন্দন করলাম, মায়ের জন্য মন খোলে দোয়া করলাম। অনুষ্ঠান শেষে মাকে জুড়িয়ে ধরলাম,ছোট ভাইকে চুমু খেলাম, মায়ের চোখ-মুখে কান্নার চিহ্ন দেখে নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা জমাটা বাঁধা দুঃখ-কষ্টটা আড়াল করতে চেষ্টা করলাম। ছোট ভাইয়ের বাবাকে দেখার তীব্র আগ্রহকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে চাইনি, তাকে বুঝতে দিতে চাইনি, সে সৌদি বাবার কাছে চলে গেলে আমার যে,খুব কষ্ট হবে!!, মা,বাবা,ছোটুর কথা খুব মনে পড়বে! তাদের স্মৃতি গুলো আমায় খুব কাঁদাবে!
এই সে—ই জল্পনা কল্পনা করে, কখন—কিভাবে যে,(বৃহস্পতিবারের) গোধূলি লগ্ন পার হলো! রাতের শোভ তারা ভেসে উঠলো,ভুঝতেও পারিনি।
চাঁদ পিরিয়ে সুর্য আসলো,পরম্পরায় বিদায়ের ঘন্টা বাজতে লাগলো, প্রথানুযায়ী নিকটতম ও দূরবর্তী আত্মীয় স্বজনদের মাঝে মেহমানদ্বারি হলো,বিদায়ের গান শুনা হলো,পরস্পরের মাঝে বিদায় বেদনার বিন্দু দিয়ে কাপড় ভিজা হলো,
রক্তিম সূর্যটা পশ্চিমা আকাশে ডলে পড়লো, বিদায়ের কাপড় দারা সে নিজেক আব্রীত করলো, গায়ে হলুদের সাজে নিজেকে সাজালো।কেমন যেন, সূর্যটাও আমার মাকে বিদায় জানাতে নতুন সাজে সাজলো।
ইতিমধ্যে হঠাৎ জানালার ফাঁক দিয়ে দেখি, কা’বার চাদরের ন্যায় কালো কুচকুচে গাড়িটা বাড়ির পাশে এসে বিদায়ের হুইসেল দিচ্ছে, ঘর-বাড়ি আত্মীয় স্বজন সবাইকে ছেড়ে তার মধ্যে ঢুকতে আহবান করছে। একাকিত্ব, বিরহ বেদনা সহ্য করে, ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’হয়ে পরিচিত বস্তুগুলো অপরিচিতির দিকে টেলে দিলাম।অবশেষে আমি, ছোট্র বোন, মামা,মামণি, খালা-খালু,নানা-নানি সবাই মিলে বিদায় জানানোর উদ্দেশ্য এয়ারপোর্টে যাত্রা শুরু করলাম। কিন্তু ভাগ্যের কি নিলা-খেলা।
যাত্রা পথে জ্যামে আটকে যেতে হলো প্রায় আড়াই ঘন্টা , রাত তখন 8.30মিনিট,অথচ মায়ের ফ্লাইট
9.30 মিনিটে, এখনো জ্যাম ছাড়ছে না,পরে আছি, সে যাত্রাবাড়ীর ঐতিহাসিক জ্যামজটে, এহেন পরিস্থিতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সবাই,ভয়ে-আতঙ্কে চিল্লাচিল্লি -হৈ-হুল্লোড় শুরু হয়ে গেলো গাড়ির ভিতর,মহিলারা ইউনুস নবীর দোয়া নিয়ে বিলাপ শুরু করে দিলা, , মনে হচ্ছিল ইউনুস নবীর ২য় মাছের পেটে ছিলাম আমরা।অবশেষে রব্বে কা’বার কৃপাদৃষ্টি পড়লো আমাদের উপর, তার অফুরন্ত রহমতে, ট্রাফিক পুলিশের বাঁশির হুইসালে, সুলাইমান (আঃ)এর উড়ন্ত সিংহাসনের ন্যায় পৌছালাম ইয়ার পোর্টের দ্বারপ্রান্তে।
রাত তখন ১০ টা ছুঁই ছুঁই, সিরিয়ালে প্রবেশ করলাম সীমানা যখন শেষ হয়ে এলো, মা তখন স্ব জুড়ে কান্না শুরু করছেন, আর বলছেন!বাবা! ভালো করে লেখা পড়া করিস, আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, আমার মা দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না, কারণ তিনি তাঁর প্রিয় ছেলে-মেয়েকে ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, পরক্ষণে ফেরেশতার ন্যায় এক ভদ্রলোক এসে আমার মা আর ভাইকে প্রবেশ করিয়ে দিলেন। আমি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। অতঃপর স্বদেশ ত্যাগ করে চলে গেলেন সৌদি আরবে আল্লাহ তাআলা তাঁকে সুস্থ শরীর নিয়ে ফিরার তৌফিক দান করুক আমিন!
মূল লেখক :মুহাম্মাদ হাবিবুর রহমান
সম্পাদক : মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ রাব্বানী