বিদআতের আরেক নাম ঈদে মিলাদুন্নবী।

قوله تعالى:

 لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ  كثيرا  

      قال رسول الله صلى الله عليه وسلم  :  مَن أَحْدَثَ في أَمْرِنَا هذا ما ليسَ فِيهِ، فَهو رَدٌّ

আজ রবিউল আওয়াল মাসের …… তারিখ, হিজরি সনের মধ্যে রবিউল আওয়াল মাস একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস.কারণ, হযরত মুহাম্মাদ সাঃ. এ মাসেই দুনিয়াতে আগমন করেছেন,এবং মৃত্যিুবরণ করেছেন,আবার হিজরতও করেছেন, তাই এর গুরুত্ব অপরীসিম। কিন্তু আমাদের সমাজে এ মাসটি যেভাবে পালিত হয়, শরীয়তে এর কোন ভিত্তি নেই, প্রতিবছর রবিউল আওয়াল মাস আসতেই আমাদের সমাজে, দেশে, বিশেষ করে আমাদের এই উপমহাদেশে রীতিমতো একটি উৎসবের আকার ধারণ করে। দেশব্যাপী মিলাদুন্নবী নামে বিশাল বড় মীলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগণ   তাই আমাদেরকে মীলাদ সম্পর্কে জানতে হবে।

মীলাদ ( (ميلاد শব্দের অর্থঃ জন্ম, জন্মকাল,ও জন্মতারিখ। পরিভাষায় মিলাদ/ মিলাদ মাহফিল বলতে বোঝায়, রাসুল সাঃ এর জন্ম বিত্তান্ত নিয়ে আলোচনা/ জন্ম বিত্তান্ত নিয়ে আলোচনা মজলিস। তবে আমাদের দেশের প্রচলিত মিলাদ মাহফিল বলতে সাধারণত:- বোঝায় ঐসব অনুষ্ঠান,যেখানে রাসুল সা. এর প্রশংসা ‍মূলক বিভিন্ন কসীদা পাঠ করা হয়, ও সমস্বরে দুরুদ পাঠ করা হয়, এবং অনেক স্থানে দুরুদ পাঠ করার সময় রাসুল সা. মজলিসে হাজির নাজির হয়ে যান – এই বিশ্বাসে কিয়ামও করা হয়, আবার  কোথাও ৬৩ কেজি কেইক বানিয়ে জন্মদিনের ‍উৎসবও পালন করা হয়, এসব করা হলে রাসুল সা. এর জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা হোক বা না হোক সেটাকে মীলাদ মাহফিল মনে করা হয়,আর এসব না হলে অর্থাৎ তাওয়ালুদ পাঠ না হলে, সমস্বরে দুরুদ পাঠ না হলে, কিয়াম করা না হলে সেটাকে  মীলাদ মনে করা হয় না, চাই সে মজলিসে রাসুল সা. এর জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে যতই আলোচনা করা হোক না কেন। তাই প্রচলিত মীলাদ মাহফিল  আর সত্যিকার পারিভাষিক মীলাদ- মাহফিল তথা নবী করীম সা. এর জন্ম বৃত্তান্ত মাহফিল আমাদের সমাজে দুটি ভিন্ন  ভিন্ন রূপ পরিগ্রহ করেছে।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগণঅতএব আমাদেরকে এই  উভয়শ্রেণীর মীলাদ- মাহফিলের হুকুম জানতে হবে।  আর তা হলো,প্রকৃত মীলাদ-মাহফিল তথা শুধুমাত্র রাসুল সাঃ এর বরকতময় জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা করা মুস্তাহাব।

     আর আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ মাহফিল শরিয়তের দৃষ্টিতে বিদআত। কারণ রাসুল সাঃ বলেছেন:-

من أحدث في أمرنا ما ليس منه فهو رد

কেউ যদি আমাদের এই দ্বীনে কোন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে  তবে তা প্রত্যাখাত হবে। ( বুখারী-মুসলিম)

আর এই ঈদে মীলাদুন্নবী নতুন আবিস্কৃত বিষয়, যা নবী করীম সাঃ এর  ‍নবুওয়াত প্রাপ্তির দীর্ঘ ২৩ বৎসর ছিলনা, খুলাফায়ে রাশেদীনের জমানায় ছিলনা, সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহ তা’আলা আনহুম আজমাঈনদের জমানায় ছিলনা,অতঃপর তাবিঈন, তাবে তাবেঈন খায়রুল কুরুনের ৪০০  হিজরি পর্যন্ত ছিলনা।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগণ সুতরাং বুঝাগেল এই তথা কথিত  ঈদে মিলাদুন্নবী খায়রুল কুরুনের পর এক নব্য ফেৎনা, তার উৎপত্তি কোথা থেকে হয়েছিল যদি জানতে চান ,তাহলে ইতিহাসের পৃষ্টা উল্টিয়ে দেখুন। ৬ ষ্ঠ শতাব্দী পর্যন্ত কোন সাহাবী,তাবিঈন, তাবে-তাবিঈন, মুহাদ্দিছীন ফকীহ ও বুযুর্গ এই মীলাদের প্রচলন করেননি। বরং এই নব্য গোমরাহীর সূচনাটা হয়ে ছিল, ইরাকের মুসেল শহরের অপচয়ী ও ধর্মীয় ব্যাপারে উদাসীন বাদশাহ মুজাফফরুদ্দীন কুকরী ইবনে আরবাল নির্দেশে,সর্ব প্রথম ৬০৪ হিজরিতে এই মীলাদ-মাহফিলের সূচনা হয়,আল্লামা যাহাবী রহ. এ দিনের অপচয়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ

كان ينفق كل سنة على مولد النبي صلى الله وسلم نحو ثلاث مأة الف – (دول الاسلام ج2 ص103)

অর্থাৎ, সে প্রতি বৎসর মীলাদ-মাহফিলে প্রায় তিন লাখ ( দেরহাম/দীনার) ব্যয় করত।

তবে এ ব্যাপারে মীলাদের স্বপক্ষে দলীলাদী সম্বলিত কিতাব রচনা করে বাদশাহর কাছ থেকে প্রচুর অর্থ কড়ি হাতিয়ে নিয়েছিলেন,দুনিয়ালোভী দরবারী মৌলভী উমার ইবনে দেহইয়া আবুল খাত্তাব। ইবনে হাজার আসকালানী রহ. তার ব্যাপারে বলেন

كثير الوقيقة فى الائمة وفي السلف من العلماء خبيث …….أحمق شديد الكبرقليل النظر في أمور الدين متهاونا (لسان الميزان ج 4  ص 296)

অর্থাৎ, সে আইম্মায়ে দ্বীন এবং পূর্বসূরী উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে অত্যন্ত আপত্তিকর ও গালিগালাজ মূলক কথাবার্তা বলত । সে দুষ্টভাষী,আহমক এবং অত্যান্ত অহংকারী ছিল। আর ধর্মীয় ব্যাপারে ছিল চরম উদাসীন।

সুতরাং উপরোক্ত বিবরণ থেকে বুঝা গেল মীলাদ মাহফিল প্রচলনকারীদের একজন হলেন ধোকাবাজ বাটপার প্রতারক, ধূর্তবাজ বাদশাহ,  আরেকজন হলেন সরকারের পাচাটা গোলাম,  স্বার্থান্বেষী  দুনিয়ালোভী মৌলভী।   আর কিছু  পীর, সূফী- যারা ধর্মীয় জ্ঞানের গভীরতায় পৌঁছেননি। এ তিন দলের সমন্বিত প্রয়াস ও অপ-প্রচারে, এই ঈদে মিলাদুন্নবী ও জুশনে জুলুসের এর জন্ম হয়।  

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগণ

প্রচলিত মীলাদ-মাহফিল এটা চার মাজহাবের চারও ইমামের ঐক্যমতে বেদদ’আত,   

 আল্লামা আহমদ ইবনে মুহাম্মাদ মিসরী মালেকী ( রহ.) লেখেনঃ

قد اتفق علماء المذاهب الاربعة بذم هذا العمل-(القول المعتد)

অর্থাৎ,মাযহাব চতুষ্ঠয়ের উলামায়ের কেরাম এই কাজ ( মীলাদ) নিন্দনীয় হওয়ার ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ।

আল্লামা আব্দুর রহমান মাগরীবী রহ. তার ফাতাওয়ায় উল্লেখ করেন ঃ

إن عمل المولد بدعة لم يقل به ولم يفعله رسول الله صلى الله عليه وسلم والخلفاء والائمة-(كذا فى ا لشرعية الالهية)

অর্থাৎ, মীলাদকর্ম বিদআত । রাসুল সাঃ খোলাফায়ে রাশেদীন ও ইমামগণ কেউ এ ব্যাপারে বলেননি এবং তা করেননি।

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগণ সুতরাং ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিলকে সুস্পষ্ট বেদ’আত ও গোমরাহী জেনেও যারা আশেকে নবী নাম দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করতে চাই। তারা আসলে আশেকে রাসুল নই ,বরং আশেকে  বাটপার, আশেকে সিন্নি,আশেকে জিলাপি, আশেকে রাসুল তো তাকেই বলা যায়, যার মধ্যে রাসুল সা এর পরিপূর্ণ সুন্নাত থাকে।

 আর তাদের সুন্নাতের যে অবস্থা?; না আছে ‍থুৎনি দাড়ি,মাথায় টুপি, পরনে লুঙ্গি, না আছে পাক-নাপাকের বাছবিচার, না আছে নামাজ – রোজার খবর,  গাজা খেয়ে টাল হয়ে  ঘোরে, বানরের লেঞ্জার মতো জটলাবাধা চুল নিয়ে  খেলা করে,

  আরে বেটা আশেকে রাসুল যদি দেখতে হয়, তাহলে সাহাবিদের দিকে দেখ, হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামান রাযি. ইরান বিজয় করার পর, ইরানের শাহানশাহ কিসরায় একবার আপ্যায়নে ডাকা হলো। তিনি যখন খেতে শুরু করলেন, তখন হযরত হুযাইফা রাযি.র হাত থেকে খাবারের একটি লোকমা নিচে পড়ে গেলে, পতিত লোকমাটি তোলার জন্য হাত বাড়ালেন। পাশ থেকে এক ব্যক্তি ইশারা করে বলছিলেন, তুমি এ কি  করছো? সমকালীন পৃথিবীর পরাশক্তি কিসরার দরবার.এই দরবারে বসে যদি তুমি পতিত লোকমা তুলে খাও. তাহলে তারা তোমাদেরকে তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখবে। মনে করবে, তোমরা খুবই নিম্নশ্রেণীর মানুষ। উত্তরে হযরত হুযাইফা রাযি. যা বলেছিলেন, তা সোনার হরফে লেখে রাখার যোগ্য। তিনি বলেছিলেন,

” أأترك سنّة حبيبي لهؤلاء الحمقاء”

আমি কি এই বেকুদের কারণে আমার বন্ধু ( রাসুলে আরবি সা.) এর সুন্নাত ছেড়ে দিব। চাই এরা ভালা মনে করুক কিংবা মন্দ,সম্মান করুক কিংবা অপমান, মূল্যায়ন করুক কিংবা তিরস্কার; আমি আমার নবীর ‍সুন্নাত ছাড়তে পারবো না। উহুদের ময়দানে হযরত আবু দুজানা রাযি. দেখলেন হযরত রাসুল সা. এর প্রতি বৃষ্টির মতো তীর বষিত হচ্ছে। তখন তিঁনি তীরের দিকে বুক পেতে দিয়ে রাসুল সা. েএর ডাল বনে গিয়েছিলেন. তা

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুগণ পরিশেষে বলতে চাই।

বর্তমানে বাংলাদেশের ধর্মমুন্ত্রী আল্লামা আফম খালিদ সাহেবকে উধার্ত আহবান করবো। যে আপনি সমস্ত মাজারপূজারীদেরকে, বন্ডপীরদেরকে, প্রচলিত মীলাদ মাহফিল পালন কারীদেরকে, সমস্ত ফেরাকেয়াকে বাতেলাদেরকে, আমাদের সাথে মুবাহাছায় বসতে বলেন, যদি তারা মুবাহাছায় জিতে যায়, তাহলে আমরা তাদেরটা মেনে নিবো, আর যদি তারা মুবাহাছায় হেরে যায়, তাহলে তারা  আমাদেরটা মেনে নিবে, অন্যথায়, বাংলার টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত যতগুলো মাজার পূজা, কবর পূজা, বিদআতি, শিরেকী আড্ডাখানা আছে সব ভেঙ্গে চুরমার করে দেওয়া হবে, এবং ভন্ডবাবাগুলোকে চুলে ধরে ধরে বঙ্গবসাগরে চুবানো হবে, বঙ্গবসাগরে চুবানো হবে,   ইনশা আল্লাহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *